আগামীকাল চিত্রনায়ক সালমান শাহর জন্মবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৫২ বছর। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্ম নেন চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। প্রয়াণ ও জন্মদিনে সিনেমাপাড়ার আলোচনায় উঠে আসেন সালমান। তার কাছের মানুষ, সহ-অভিনেতা ও পরিচালকেরা স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন। তেমনই একজন হলেন নির্মাতা রেজা হাসমত। নায়কের আসন্ন জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কালবেলার সঙ্গে তিনি ভাগ করেছেন সালমান শাহের সঙ্গে জমে থাকা তার নানান স্মৃতি।
রেজা জানান, সালমান শাহের জীবনের সর্বশেষ শুটিং-ডাবিং তার ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমায়। এতে সালমান শাহ ছাড়াও অভিনয় করেছেন শাবনূর, রাজীব, মিশা সওদাগরসহ অনেকে।
পরিচালক রেজা বলেন, ‘সিনেমার ডাবিংয়ে আসার আগের দিন ১১টায় তার মৃত্যুর খবর পাই। প্রথমে ভেবেছিলাম অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। যখন জানতে তিনি মারা গেছেন, আমি প্রায় ৪ ঘণ্টা সেন্সলেস ছিলাম। তারপর কী হয়েছে বলতে পারব না!’
তিনি বলেন, ‘অনেকটা সময় তার সঙ্গে পার করেছি। তার বাসায় গিয়েছি, আড্ডা দিয়েছি। কিন্তু তিনি আত্মহ্ত্যা করবেন ভাবতে পারিনি। ধোঁয়াশা আছে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। কারণ আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। একমাত্র আল্লাহই জানেন, আর তিনি জানেন। এ ছাড়া যদি তার মৃত্যুর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকেন তারা জানেন। আমার যেটা মনে হয়—সালমান খুব ডেসপারেট এবং জেদি ছিলেন। আমার মনে হয় নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তার স্ত্রীকে ভয় দেখাতে ফাঁসির অভিনয় করতে গিয়ে অরজিনালি ফাঁসি হয়ে গেছে তার। এটা আমার ধারণা। এ ছাড়া ওই সময়ে ওই বাসাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটবে বলে আমার মনে হয় না। তা ছাড়া সালমানকে মেরে ফেলা হবে এটাও আমার মনে হয় না। কারণ সালমান এমনই এক ব্যক্তি ছিলেন, তার শত্রুও তাকে ভালোবাসতেন। তার শত্রু ছিল না। হয়তো ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়নে আত্মহত্যা করে ফেলেছেন কিংবা নিজের অজান্তে হয়ে গেছে—এমন একটা কিছু হতে পারে।’
স্মৃতিচারণ করে পরিচালক বলেন, ‘৫ তারিখে সকাল থেকে শুটিংয়ে তাকে কিছুটা অস্থির দেখেছি। আমি কিছু সিকোয়েন্স শুট করার পরিকল্পনা নিয়ে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে শহীদুল ইসলাম খোকনের বাড়িতে যাই। কিন্তু সালমান আমাকে অন্য কিছু সিন করতে বলেন। আমি তখন বললাম—এগুলো করার জন্য আমি আজ প্রস্তুতি নিইনি। সালমান বললেন, না আজকেই করুন। আমি তা-ই কললাম। সেখানে রাজীব ভাই ছিলেন, শাবনূর ছিলেন। সালমানকে অস্থির দেখেছি। কিন্তু তিনি যে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেবেন তেমন কিছু মনে হয়নি। সে মাঝেমধ্যে অস্থির থাকত, একটু রাগারাগি করত। বাসায় কিছু হলে শুটিং স্পটে তা বোঝা যেত। তার মোড ভালো থাকত না।’
নির্মাতা আরও বলেন, ‘অনেক সময় তাকে দিয়ে রোমান্টিক দৃশ্য করাতে গিয়ে পারিনি। তিনি বলতেন—আজ করব না, কারণ রোমান্টিক মোড নেই। মৃত্যুর আগের দিনও মনে হয়েছে তিনি একটা অস্থিরতার মধ্যে আছেন। যদিও কাউকে বুঝতে দেননি। তিনি বিভিন্ন চিন্তায় বিভিন্নভাবে ফ্রাস্টেশনে ভুগছিলেন।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘সালমানের জায়গা কেউ দখল করেতে পারবে না। সে যে জায়গায় আছে সেখানেই থাকবে। সালমানের মৃত্যুর ১০ বছর পর যাদের জন্ম হয়েছে তারাও সালমানের ভক্ত, এটা নজিরবিহীন। তার অ্যাক্টিভিটি মানুষকে মোহিত করেছে। এটা অনেক বড় পাওয়া। কেউ এসে তাকে বোল্ড আউট করে সেই জায়গায় বসতে পারবে না। ২৭ বছর পরও সালমান তার জায়গা থেকে আরও অ্যাডভান্স হয়েছেন।’