চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের (২৬) সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুল ফেরদৌসের। কিন্তু কে জানত তাদের সুখের ব্যাপ্তিটা হবে মাত্র কয়েক মাসের!
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের গুইল্লাখালী গ্রামের মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে হেলাল উদ্দিন মালয়েশিয়ায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাহাড় ধসে তার মৃত্যু হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অভাব অনটনের সংসারে তারা চার বোন ও দুই ভাই। পরিবারের ২য় পুত্র সন্তান হেলাল। অভাবের সংসার সামাল দিতে গিয়ে পিতা ছৈয়দ আহমদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সংসারের এই অবস্থায় ১৬ বছর বয়সে হেলাল সংসারের বিশাল দায়িত্ব সামাল দেয়া ও চার বোনকে পাত্রস্থ করতে অনন্যোপায় হয়ে সাগর পথে দালালের হাত ধরে মালেশিয়া পাড়ি জমান। এত ছোট বয়সে আদরের সন্তানকে এমন অনিশ্চিত প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাঠাতে হেলালের বাবা আরও ভেঙে পড়েন। মানসিকভাবে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। এদিকে হেলালের শুরু হয় এক মানবেতর জীবন। পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। পুত্রশোকে পাগল প্রায় ছৈয়দ আহমদ জীবিকার তাগিদে একদিন সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাদের সংসারে অভাবের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। বাবার মৃত্যুর দেড় বছরের মাথায় মারা যান হেলালের মা আমেনা বেগমও। এদিকে দীর্ঘদিন প্রবাসে মানবেতর জীবন কাটান হেলার। বছর দুয়েক পর আস্তে আস্তে সেখানে কাজের সুযোগ পান তিনি। একে একে বিয়ে দেন চার বোনের। চলতি বছর মালয়েশিয়ার ভিসা পান (বৈধ হোন)। পরে দেশে এসে বিয়ে করে আবার মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। কিন্তু সুখের সময় শুরু হতেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো।
নিহতের চাচাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইয়ের পরিবার মাটিতে মিশে গেল। সদ্য স্বামী হারানো ভাবিকে কীভাবে সান্ত্বনা দেবো জানা নেই। ভাইটা সারা জীবন অমানুষিক পরিশ্রমই করে গেল। ভাইয়ের লাশটা আনতে পারব কিনা অনিশ্চয়তাই আছি। চোখের সামনেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল পরিবারটি।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (ইউপি মেম্বার) মহিউদ্দিন বলেন, ‘ছেলেটা অনেক শান্তশিষ্ট ছিল। অনেক সংগ্রাম করে পরিবারের হাল ধরেছে। এমন মৃত্যু সত্যিই একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়।’