প্রেক্ষাপট
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতি মাসেই কোন না কোন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রতিনিধি বা সিনেট সদস্যদের বাংলাদেশে আগমন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক ব্যুরোর ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটেরি মিরা রেসনিক।
আগ্রহ থেকে চাপ
অনেকগুলো বিষয়েই বাংলাদেশ আমেরিকার কাছে আগ্রহের কেন্দুবিন্দুতে অবস্থান করছে। এবং এই আগ্রহকে সফল করতে কিছু চাপ বাংলাদেশের উপর অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভিসা স্যাংশন তার মধ্যে অন্যতম।
মিরা রেসনিকের দপ্তরের কাজ
মিরা রেসনিক যেই ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই ব্যুরো অফ পলিটিক্যাল-মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি এজেন্সি যা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে সেতুবন্ধন করে। এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, নিরাপত্তা সহায়তা, সামরিক অভিযান, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং নীতি, স্থানের সামরিক ব্যবহার এবং প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নীতি প্রদান করে। এই এজেন্সির প্রধানকে বলা রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি অফ স্টেট। মিরা রেসনিক সেই এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেসিকা লুইস এর ডেপুটি।
ভ্রমণের উদ্দেশ্য পাবলিক রিলেশন
ইউএস এম্বাসির প্রটোকল অনুযায়ী সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন, সুশাসন, মানবাধিকার বিষয়গুলো তো আসবেই, কিন্তু মিরা রেসনিক এর আসল এজেন্ডা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী আঞ্চলিক দেশসুমহের সাথে প্রতিরক্ষা বিষয়ে বাংলাদেশের সিভিলিয়ান সোসাইটিকে জানানো বা সতর্ক করা। বিশেষ করে চীন, মায়ানমার এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের কি কি প্রতিরক্ষা কৌশল নেয়া উচিত সে নিয়ে আলোচনা করবেন। কারণ উনি যে ব্যুরোর প্রতিনিধিত্ব করছেন, সে ব্যুরোর কাজই হচ্ছে এই সকল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করা, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কৌশল তৈরি করা, আর সংশ্লিষ্ট দেশকে বুঝিয়ে সেই কৌশল গ্রহণ করানো।
সামরিক আগ্রহ
সাধারণত বিভিন্ন দেশের সাথে প্রতিরক্ষা সামরিক চুক্তি সমূহ করে থাকে এই ব্যুরো থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের সাথে সামরিক অস্ত্র বিক্রয় চুক্তি করার কথা বলে আসছেন। তিনি ২৪শে এপ্রিল, ২০২২ এ বলেন- “প্রথমত আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারি। আমরা অন্যান্য সমমনা পরস্পর সহযোগি দেশগুলোর সমন্বয়ে নিজেদের সম্পৃক্ততাকে আরও জোরদার করতে পারি। আমরা জিসমিয়া ও আকসা এ দুটি মৌলিক চুক্তিতেও যেতে পারি। জিসমিয়া চুক্তির মাধ্যমে সামরিক ক্রয়-সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানের মূলনীতি নির্ধারিত হবে। এ রূপরেখাটি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী অভীষ্ট ২০৩০ অর্জনে অবদান রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত হবে।“
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় এখনই এই চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি নয়। বাংলাদেশ চাইছে ইলেকশনের পরে এই ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করবে। ধারণা করা যায় জিসমিয়া ও আকসা চুক্তি স্বাক্ষরকে তরান্বিত করতেই মিরা রেসনিক এর এই সফর।
সম্ভাব্য লক্ষ্য
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে মিরা রেসনিক আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অস্ত্র স্থানান্তরের ব্যুরো অফিসের তত্ত্বাবধান করেন, যা বিদেশি সামরিক অস্ত্র বিক্রয়, তৃতীয় পক্ষের সাথে ক্রয় বিক্রয়, এবং প্রতিরক্ষা কৌশল ডিজাইন ও বিক্রয় তত্ত্বাবধান করেন। এবং জি২জি এর মাধ্যমে প্রতি বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার এরও বেশি লেনদেন করে। বাংলাদেশের অগ্রসরমান অর্থনীতি, মায়ানমারে চীন-রাশিয়ার যৌথ কর্মকান্ড, এই সকল কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের আঞ্চলিক গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্র এই কারণেই চাইছে বাংলাদেশের সাথে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কৌশল বাংলাদেশকে দিতে।