কর্মদিবসে সকালে খেয়ে না খেয়ে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। আবার ছুটির দিনে বিছানা ছেড়ে উঠার তাড়াও পছন্দ নয়। অনেকে বাইরে গিয়ে সকালের নাশতা করাকেও আদিখ্যেতা মনে করেন। কিন্তু সকালে বাইরে নাশতা করা নতুন কিছু নয়। অনেক বছর আগ থেকেই এর প্রচলন রয়েছে।
তবে বর্তমানে ঢাকায় সকালের নাশতা করার বিকেল্পের অভাব নেই। যত্রতত্র হোটেলে গতানুগতিক নাশতার পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্তোরায় স্বল্প দামে বাঙ্গালি খাবারের পাশাপাশি কফিশপে ব্রেকফাস্ট এবং পাঁচ তারকা হোটেলে রয়েছে বুফে। কোনটি রেখে কোনটি খাওয়া যায় তা নিয়ে ভাবনায় পরতে হয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবে ব্যক্তির পছন্দ এবং সামর্থ্য।
পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মী যে কাউকে সময় দেয়ার জন্য এখন আর ডিনার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে পারেন নাশতা করার জন্য। শহরের অলিতে গলিতে প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন বাহারি সাজের রেস্টুরেন্ট।
হোটেল-
হোটেল এমন একটি অপশন যেখানে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সকালের নাশতা করতে পারেন। সকালের নাশতা পাওয়া যায় ঢাকায় এমন হোটেলের অভাব নেই। এর মধ্যে মতিঝিলের হীরাঝিল, পুরান ঢাকার চৌরঙ্গী, নিরব হোটেল, রাজ্জাক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অন্যতম। এই হোটেলগুলো ট্রাডিশনাল স্বাদ ধরে রেখে বিভিন্ন আইটেমের খাবার পরিবেশন করে থাকে।
চৌরঙ্গীর লুচি-ডাল, হীরাঝিলের মুগডাল, কলিজা ভুনা, লেমন চিকেন এবং খিচুড়ি, নিরব হোটেলের পুরি-ভাজি উপভোগ করার মতন কিছু পদ।
রেস্তোরা চেইন-
হোটেল এবং রেস্তোরার মিশেলে কিছু রেস্তোরা আছে যেখানে সুলভ মূল্যে মজাদার নাশতা পরিবেশন করা হয়। এদের শাখাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শহর জুড়ে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো স্টার কাবাব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। এর প্রধান শাখা এলিফ্যান্ট রোডে। ধানমন্ডি, বনানী, কারওয়ান বাজারসহ ঢাকায়ই এর মোট ৮ টি শাখা রয়েছে। লেগ রোস্ট, মুরগির সুপ, ডাল-খাসি, পরোটা-চা ইত্যাদি বাহারি পদের সঙ্গে এর ব্রেকফাস্ট থালা অধিক জনপ্রিয়।
নবাবী ভোজ নামের আরেকটি রেস্তোরা চেইন ব্রেকফাস্টের জন্য বিখ্যাত। বেইলী রোড, মোহাম্মদপুর, লালবাগ মিলিয়ে ঢাকায় এর মোট ৪ টি শাখা আছে । নবাবী স্পেশাল পরোটা-চা, বোনলেস বিফ ঝাল ফ্রাই, রুমালি রুটি এবং খিচুড়ির জন্য এটি অধিক জনপ্রিয়।
বনানীর মত জায়গায় রুফটপ রেস্তোরায় সুলভ মূল্যে নাশতা পেয়ে যাবেন অর্গানিক ডাইন নামের রেস্টুরেন্টে। লুচি, বিফ-ডাল গোস্ত, হালুয়া, দই-চিড়া এবং ফ্রেশ জুস এই রেস্তোরার পপুলার খাবার।
কফিশপ-
ব্রুটাউন ক্যাফে, নর্থ এন্ড কফি রোস্টার, ক্রিমসন কাপ, হোয়াইট ক্যানারি ক্যাফে, গ্লোরিয়া জিন্স এই কফিশপগুলো শুধু কফির জন্য নয় ব্রেকফাস্ট বা ব্রাঞ্চের জন্যও জনপ্রিয়। নাশতার গতানুগতিক আইটেমের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য এ কফিশপগুলোর ব্রেকফাস্ট প্ল্যাটার খেতে পারেন। উল্লেখ্য প্রায় সব কফিশপ এই প্ল্যাটার পরিবেশন করে। সানি সাইড আপ এগ বা স্ক্র্যাম্বলড এগের সঙ্গে, সসেজ, ব্রেড টোস্ট, বিনস এই প্ল্যাটারে পরিবেশন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ফ্লেভারের প্যানকেন, ক্রসেন্ট, ডোনাট, মাফিনও পাওয়া যায়। রেস্তোরা অনুযায়ী দাম এবং স্বাদের ভিন্নতা পাবেন।
বুফে-
ভোজন রসিকদের জন্য উপযোগী একটি অপশন হলো বুফে। সঙ্গে যদি থাকে এক্সপ্লোর করার ইচ্ছা তাহলে তো কথাই নেই। তবে এক্ষেত্রে মূল্য ছাড় পাওয়ার আশা করা যাবে না।
ইন্টার কন্টিনেন্টাল, লা-মেরেডিয়ান, ওয়েস্টিনের মত পাঁচ তারকা হোটেলগুলো ৭০-৮০ পদের ব্রেকফাস্ট বুফে পরিবেশন করে। সব ধরনের কুইজিন (রন্ধনশৈলী) বুফেতে পরিবেশন করা হয়। অনেক জায়গায় লাইভ কিচেনের অপশন থাকে। অর্থাৎ যা খাওয়ার জন্য বাছাই করবেন তা আপনার সামনেই তৈরি করে দেবে।
গ্রিন লাউঞ্জ, বেইলী রোড এবং গুলশানের মাচান ঢাকার মধ্যে মোটামোটি সুলভ মুল্যে বুফে পরিবেশন করে। মাচান ২০ পদের ট্রাডিশনাল এবং গ্রীন লাউঞ্জ ৩৫ আইটেমের বাংলা ও ইংলিশ ব্রেকফাস্ট পরিবেশন করে। এইগুলোতে আইটেম সংখ্যা পাঁচ তারকা হোটেলের মত এতো বেশি না থাকলেও বুফে খাওয়ার ইচ্ছা সহজেই পূরণ করা যায়।
বাইরে সকালের নাশতা করতে হলে মাথায় রাখতে হবে সময়। হোটেল এবং রেস্তোরাগুলোতে ভোর থেকে শুরু হয়ে ১০ টার মধ্যে নাশতা শেষ হয়ে যায়। যত তাড়াতাড়ি যাবেন তত মেনুর সব আইটেম বাছাই করার সুযোগ পাবেন। বুফেতে সময়সীমা থাকে সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। কফিশপে সময়ের সীমাবদ্ধতা না থাকলেও মাঝে মাঝে লাঞ্চের (দুপুরের খাবার) সময় থেকে আর নাশতার আইটেমগুলো পরিবেশন করা হয় না।
লেখকঃ নিশাত সুলতানা