ভেজাল পণ্যে ভরপুর বাজারে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা বোঝা সহজ কাজ নয়। রঙ-গন্ধ-মোড়ক সবটাই হুবহু নকল করে পণ্য তৈরি করতে পারে প্রতারণাকারীরা। ব্যবাহারকারী বোঝার আগেই এসব প্রসাধনী ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
গত ১৩ আগস্ট সময় টিভির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের এক আবাসিক ভবনে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণে ভেজাল ও বিক্রয় নিষিদ্ধ প্রসাধনী পাওয়া গেছে। প্রায় চার লাখ টাকার প্রসাধনী জব্দ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভেজাল পণ্যের মধ্যে ইউনিলিভার ও গার্নিয়ারসহ নামি-দামি নানা ব্রান্ডের মোড়ক ব্যবহার করে ফেসপ্যাক, লিপস্টিক, শ্যাম্পু, তেল ও আইব্রো বিক্রি করা হচ্ছিল। এমনকি বিএসটিআইয়ের লোগো নকল করে প্রতারণা করা হচ্ছিল।
বাজারের এমন অবস্থায় কী করবেন তাহলে? সমাধান মিলতে পারে নিজ ঘরে তৈরি প্রসাধনীতেই!
ত্বক নিয়ে আমরা সবসময়ই সচেতন। আর চেহারার ত্বক হলো সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ। তাই চেহারায় যা ব্যবহার করছেন তা নিয়ে অধিক সচেতন হতে হবে। ত্বক পরিষ্কারে যা ব্যবহার করছি তা যেন ত্বক নষ্টকারী না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে।
আর এ ক্ষেত্রে নির্ভর করা যায় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরেই তৈরি ফেসপ্যাকের ওপর। দেখতে বাজারের কেমিক্যালযুক্ত ফেসওয়াসের মতো না হলেও, কাজ করবে সেগুলোর চেয়েও ভালোভাবে।
হাতের নাগালেই পাওয়া যায় এমন সব উপাদান দিয়ে ফেসওয়াশ বা ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরি করবেন? চলুন টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে তা জেনে নেয়া যাক-
দুধ ও মধু
এ দু’টি উপাদান মিলে কিন্তু চমৎকার এক ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। দুধে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড। ফলে এটাকে একটি নিখুঁত ফেসিয়াল ক্লিনজার বলা চলে। ল্যাকটিক এসিড বন্ধ হয়ে যাওয়া পোরস পরিষ্কার করে ও মৃত কোষ অপসারণ করতে সাহায্য করে। অপরদিকে, মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে মসৃণ করে মধু। ত্বক উজ্জ্বল করতেও মধুর সুনাম রয়েছে।
যেভাবে তৈরি করবেন
এক চা চামচ মধুর সঙ্গে দুই চা চামচ কাঁচা দুধ মেশাতে হবে। মিশ্রণটি পুরো মুখে সমানভাবে লাগিয়ে ২-৩ মিনিট পেক্ষা করুন। ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
টমেটো ও শসা
টমেটো ত্বকে দারুণভাবে কাজ করে। এতে রয়েছে ত্বকের জন্য উপকারী ভিটামিন ও পুষ্টি। আর শসা তৈলাক্ত ত্বকে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এতে পানির পরিমাণ অধিক হওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের জ্বালা-পোড়া ও ফোলাভাব কমায়। ত্বক উজ্জ্বল করে দাগ কমিয়ে দেয়।
যেভাবে তৈরি করবেন
এ ক্লিনজারটি তৈরি করতে ছোট সাইজের একটা টমেটো আর অর্ধেকটা খোসা ছাড়ানো শসা লাগবে। উপকরণ দু’টি পেস্ট করে নিতে হবে। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে মিনিট দশেক পর ধুয়ে ফেলুন। এ পেস্টটি ডিপ ফ্রিজে জমিয়ে বরফ আকারেও সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে যখন প্রয়োজন তখনই ব্যবহার করতে পারবেন ঝামেলাহীনভাবে।
আলু ও ডিমের সাদা অংশ
আলুতে থাকা এনজাইম ও ভিটামিন সি ত্বকে তারুণ্যের পরশ বুলিয়ে দেয়। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল রোধেও আলুর রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আলুর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো ত্বকের প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যার ফলে ত্বক সুস্থ থাকে। আবার ডিমে থাকা পেপটাইড হাইপারপিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যার ফলে উজ্জ্বল এবং ইভেন-টোনযুক্ত ত্বক পাওয়া যায়।
যেভাবে তৈরি করবেন
একটা মাঝারি আকারের আলু কেচে রস বের করুন। এই রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন একটা ডিমের সাদা অংশ। ভালো মতো বিট করে নিন। যে দ্রবণ তৈরি হবে তাতে এবার ভিতামিন ই ক্যাপসুল যুক্ত করুন। এবার একটা কটন প্যাড নিয়ে ক্লেনজারটি সম্পূর্ণ মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
কফি ও দই
মৃত কোষের মলিন ভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল আভা দিতে কফি ও দইয়ের মিশ্রণ দারুণভাবে কাজ করে। কফিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা খসখসে ত্বককে মসৃণ করে তুলতে পারে।
যেভাবে তৈরি করবেন
দুই টেবিল চামচ দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগানোর পর বৃত্তাকার গতিতে স্ক্রাব করতে হবে। ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন এ প্যাকটি দিয়ে স্ক্রাব করতে হবে।