আগস্ট মাসের শুরুতে ইতিবাচক ধারা দেখা গেলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে খেই হারায় পুঁজিবাজার। এটি শুধু সদ্যসমাপ্ত মাসের চিত্র নয়, গত কয়েক মাসের চিত্র অনেকটা এমন। নানা বাস্তবতায় মাসের শুরুর মেজাজ শেষ দিকে ধরে রাখতে পারছে না দেশের দুই পুঁজিবাজার। তবে শেষ হওয়া আগস্ট মাসে কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা গেছে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে ইতিবাচক ছিল পুঁজিবাজারের আচরণ। এতে শুরু হওয়া সেপ্টেম্বর মাস ঘিরে অনেক বিনিয়োগকারীর মুখে প্রত্যাশার কথা শোনা যায়। যদিও কেন তাদের এমন প্রত্যাশা, তার সদুত্তর জানা যায়নি।
আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে লেনদেন ও সূচক ছিল ইতিবাচক। এর আগে গত ১৭ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে। সেখানে অংশ নেন অ্যাসেট ম্যানেজার, ফান্ড ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ বাজারসংশ্লিষ্টরা। ওই বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব পক্ষকে বাজারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। এর পর থেকেই খানিকটা স্বস্তি ফিরতে দেখা যায় পুঁজিবাজারে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে শেষ সপ্তাহেও।
গত কয়েক মাসের শেষ সপ্তাহ অস্বস্তিতে কাটলেও আগস্টে ছিল তার ব্যতিক্রম। যে সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন লেনদেন ছিল প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা। ডিএসইর আকারে লেনদেন স্বস্তিদায়ক না হলেও তার আগের সপ্তাহের তুলনায় তা ছিল প্রায় ২ শতাংশ বেশি।
লেনদেনের পাশাপাশি এ সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছে প্রধান সূচক ডিএসইএক্সও। গত সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট ছুঁইছুঁই। যে সপ্তাহে ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ২০ পয়েন্ট। এ সপ্তাহে খানিকটা বেড়েছে বাজার মূলধনও। শুধু তা-ই নয়, আগস্ট মাসে প্রায় তিন হাজার নতুন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব চালু হয়েছে। যার ফলে মোট বিও হিসাবের সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৬১টিতে।
বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকের মুখেই শোনা যায়, নির্বাচনের আগে সরকার বাজার ভালো রাখার চেষ্টা করবে। পুঁজিবাজারের দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারী ফারহান উদ্দিনের মুখেও আশার সুর। ‘সব কিছুরই তো একটা শেষ আছে, আমার কাছে মনে হয় পুঁজিবাজারের খারাপ সময়েরও শেষ হবে’, বলেন ফারহান। আশার কথা শুনিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে তো টাকার সংকট নেই, তাহলে কেন বাজার বাড়বে না? এখন সবাই মিলে শুনছি চেষ্টা করছে, আমারও মনে হয় কিছু একটা হতে পারে।’
আরেক বিনিয়োগকারী রুবেল মিয়া অবশ্য এ মাসেই বাজার ভালো হবে, তেমনটা আশা করেন না। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই পতনটা যেন না হয়, লাভ এখন না হলে পরে হবে; কিন্তু পতন হলে তখন সব এলোমেলে হয়ে যায়।’ সেপ্টেম্বর নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শুনেছি এ মাসে বাজার ভালো থাকবে, তবে আমি খুব বেশি আশা করি না ভাই।’ তাহলে কবে আশা করেন- এমন প্রশ্নে রুবেল মিয়া বলেন, ‘অপেক্ষা করতে সমস্যা নেই, যদি বাজারে পতন না হয়।’
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও সিএ বাংলাদেশের কাউন্সিল মেম্বার মু. মাহমুদ হোসেন এফসিএ মনে করেন, পুঁজিবাজার দিনের পর দিন নেতিবাচক থাকা অযৌক্তিক। তিনি বলেন, একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, জিডিপির ভালো প্রবৃদ্ধি থাকার পরও পুঁজিবাজারের এমন আচরণ মেনে নেয়া যায় না। ‘বিশ্বব্যাংক আইএমএফের মতো সংস্থাও বলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে এগোচ্ছে, আমার প্রশ্ন দিনের পর দিন পুঁজিবাজার নেতিবাচক কেন?’ এমন প্রশ্ন রেখে তিনি নিজেই আবার বলেন, ‘সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণে।’ অবশ্য তার পরামর্শ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও আইসিবির আচরণ পরিবর্তনের। তা করতে পারলে চলতি মাসেই বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলেই আশার কথা জানান মাহমুদ হোসেন।