জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় বলে ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। জানিয়েছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমরা এখনো ভোটগ্রহণের কোনো তারিখ চূড়ান্ত করিনি। গতকাল শনিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রথম ধাপের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তবে এ সময় নির্বাচনকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে যত আলোচনা ছিল, তার কোথাও ছিল না তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে কথা বলেছে, তা ছিল বর্তমান সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকেন্দ্রিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই একই ভাষায় কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার।
অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ভারত, চীন, রাশিয়া থেকে শুরু বাকি সব দেশের কথায় ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে ভাবছে কে?
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আশপাশ দিয়েও কোনো চিন্তাভাবনা নেই আওয়ামী লীগের। বরং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার পর দলের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি আরও বাড়ছে বলে জানায় দলটির দপ্তর।
অন্যদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ শীর্ষক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয় ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি ও বক্তব্য নিয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘কীসের নির্বাচন? কার নির্বাচন? যে ভোটাধিকারের জন্য মানুষ সংগ্রাম করছে, তা পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত এ দেশে নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেই নির্বাচন হয়ে যাবে?’
তার বক্তব্য থেকে বেশ স্পষ্টতই মনে হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। বিগত ১০ বছর ধরে দলটি বলে আসছে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যদিও সর্বশেষ নির্বাচনে এ কথা বলার পরও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। এবারও তারা এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে গণপরিসরে বক্তব্য দিচ্ছে, কিন্তু দলটির অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু সূত্র বলছে ভিন্ন কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, দলের তৃণমূল নির্বাচন বর্জনের পক্ষে নেই। দলের অনেকেই আছেন যারা বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে আগ্রহী।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অনেকটা কূটনীতিকদের ভাষায় শোনা যাচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। তারা একই সঙ্গে গণমাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করছেন সংসদীয় বিরোধী দল হিসেবে। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছেন। এই দলটির পক্ষ থেকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক কোনো দাবি উত্থাপিত হয়নি।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এখনো দ্বিধাবিভক্ত বাম দলগুলো। তাদের মধ্যে কিছু অংশ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে, আবার একটি গোষ্ঠী চাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। এই বাম গোষ্ঠীর মধ্যেই আরেকটি অংশ সংসদে থাকা সব দলের সমন্বয়ে একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথাও বলছে। ফলে বাম দলগুলোর মধ্যে আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ঐক্য গড়ে ওঠেনি।
এদিকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মৌলবাদী দল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জামায়াতে ইসলামী সহিংস আন্দোলনের কথা ভাবছে। ২০১৩-১৪ সালের মতোই সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই সরকার পতন ঘটাতে চায় তারা। তবে এই কাজ করার জন্য দেশের অভ্যন্তরে তাদের তেমন কোনো সমর্থন নেই।
আসন্ন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সংঘর্ষ ও হত্যার রাজনীতির ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ নির্বাচনকে বাদ দিলে প্রতিটি নির্বাচনেই কম-বেশি সংঘর্ষ দেখেছে বাংলাদেশ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, তা তফসিল ঘোষণার আগে স্পষ্ট হবে না বলে জানিয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সিনিয়র নেতারা।