ধরুন আপনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জয়েন করলেন। জয়েনিংয়ের সময় আপনার সাথে চুক্তি ছিল, আপনি ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ড ফান্ড ও কোম্পানির আয়ের ৫% লভ্যাংশ পাবেন। চুক্তিতে আরও শর্ত ছিল, এ লভ্যাংশ “শ্রমিক কল্যাণ তহবিল”-এ জমা হবে যা আপনি চাকরির ছাড়ার সময় বা অবসরের সময় আনুপাতিক হারে বুঝে নেবেন। এখন আপনার অবসর বা চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে যদি এ চুক্তির খেলাপ হয় তাহলে অবশ্যই আপনি সংক্ষুব্ধ হবেন এবং শ্রম আদালতে যাবেন মামলা করতে। এই অধিকার বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার আছে।
গ্রামীণ কল্যাণ থেকে গ্রামীণ টেলিকম
তথ্যপ্রযুক্তি কার্যক্রম, গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জীবন মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেড গঠন করা হয়। এই কোম্পানির শতভাগ ইক্যুইটি সরবরাহ করেছে গ্রামীণ কল্যাণ। গ্রামীনফোনসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করেছে গ্রামীণ টেলিকম। গ্রামীণ ফোনের ৩৪.২০% শেয়ার রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের কাছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গতকালের দর অনুসারে এ শেয়ারের দাম ১৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। সামাজিক ব্যাবসা প্রসারের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ নারীদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বল্প দামে “পল্লীফোন” দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯৭ সালে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ইউনুস ফাইল: মামলা কেন হলো?
উপরে যে ঘটনাটির উল্লেখ করেছি, ঠিক এমনটাই ঘটছে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া শ্রম আদালতের মামলায়। অভিযোগে বলা হয়, কর্মচারী অংশীদারিত্ব ও কল্যাণ তহবিল গঠন করার কথা থাকলেও, সেটা করা হয়নি এবং কোম্পানির ৫ শতাংশ লভ্যাংশ কর্মচারীদের দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়াও কর্মী ছাটাইয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির নিয়ম মানা হয়নি এবং কর্মীদের স্থায়ী করতে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে, হয়েছে অনিয়ম।
মামলার অভিযোগ, সাক্ষী ও শুনানি
অভিযোগ ১: লেবার আইনের ৪ এর (৭) এবং (৮) ধারায় ১০১ জন শ্রমিককে স্থায়ী করা হয়নি এবং ১১৭ জনকে নিয়মনীতি মেনে ছাটাই করা হয়নি।
প্রথম অভিযোগের সাক্ষ্য ও শুনানি
২২ আগস্ট শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম সেদিন সাক্ষ্য দেন।
মামলায় অপর তিন বিবাদী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে পারেন। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাঁদের স্থায়ী করা হয়নি।
এছাড়াও ১১৭ জন কর্মচারীকে ছাটাইয়ের প্রমাণ তারা পান যাদের নিয়মনীতি মেনে ছাটাই করা হয়নি।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এ অভিযোগ আমলে নেন আদালত এবং গ্রামীণ টেলিকম ও ডঃ ইউনুসের প্রতি সমন জারি করে ১৬ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন।
অভিযোগ ২: ২৩৪ ধারা অনুযায়ী তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা করা হয়নি।
মামলা গ্রহণ
শ্রম আইনের লঙ্ঘন এবং কোম্পানি আইনের ব্যত্যয় ঘটায় ২০০৬ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া ১৮ জন কর্মচারী ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) এই মামলা করেন। আদালত এই মামলা গ্রহণ করেন এবং ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সমনের উত্তর চেয়েছেন। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে জানান ডঃ মো ইউনুসের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন।
৫% লভ্যাংশ হারে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা জমা হবার কথা থাকলেও সেই টাকা জমা করা হয়নি।
এর আগে শ্রম কল্যাণ তহবিলের ৪৩৭ কোটি টাকা দাবি করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা হয়। ২০১৭ সালে ১৭৬ জন কর্মচারি বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন। তবে তাদের দাবিকৃত অর্থ পরিশোধের প্রেক্ষিতে মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়ে যায়।
ইউনূসের অসাধু পন্থা
এত অনিয়ম, চাকরি স্থায়ী না করা এবং চাকরির শর্ত অনুযায়ি ৫% লভ্যাংশ না দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম অসাধু পন্থায় বড় অংকের টাকা নিয়ে আইনজীবী নিয়োগ করেন , যাতে তারা অভিযোগ দায়ের করা কর্মচারীদের সাথে সমঝোতা করতে পারে। এই আইনজীবীরা গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে অভিযোগ দায়েরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নাম মাত্র টাকা দিয়ে ফয়সালা করার চেষ্টা করেন এবং অভিযোগ তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করেন। এই সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন আছে।
গ্রামীণ টেলিকম ও ইউনূসের অপরাধসমূহ
সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, সুবিধাবঞ্চিতদের সুযোগ-সুবিধা ও জীবনমান বৃদ্ধি করতে বদ্ধ পরিকর গ্রামীণ টেলিকম নিজস্ব কর্মচারীদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারে নাই।
কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রাপ্য চাকরীর নিশ্চয়তা ও লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা, যা গ্রামীন গ্রুপের মোট সম্পদের তুলনায় নগণ্য একটি অংক, সেটা দিতেও তারা অপারগতা প্রকাশ করে। এ থেকে আসলে বোঝা যায় ড. ইউনুস কতটা স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষণ করেন।
নিজেদের প্রাপ্য টাকা আদায়ে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের ঘরের টিন, খামারের গরু তুলে নিয়ে এসে সামাজিকভাবে হেয় করতেও পিছপা হয় না। কিন্তু কারো প্রাপ্য টাকা, সুবিধাদি দিতে গেলে ডঃ ইউনুস অনৈতিকতা, ছলনা আর মিথ্যার আশ্রয় নেন। পরিশেষে বিশ্ববাসীর কাছে এসব তথ্য ধামাচাপা দিয়ে, নাহলে আড়াল করে তিনি নিজেকে গরীবের মাসীহা হিসাবে উপস্থাপন করেন।
দেশের মানুষকে ঠকিয়ে ইউনূস ফান্ড দিচ্ছে বিদেশে
একটু তলিয়ে দেখলে আরও চমকপ্রদ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের টাকা আত্মসাৎ করলেও, ইউনূস নিয়ম করে বিভিন্ন বিদেশি ফান্ডে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছে।
বস্তুত এই মোটা অংকের চাঁদার কারণেই ডঃ ইউনুসের পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন ৪১ জন বিদেশী
বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের ফান্ডে নিজের ইমেইজ বাচাতে আর নিজের সাধুত্ব প্রচারে যে পরিমাণ চাঁদা দেন ড. ইউনুস, তার তুলনায় শ্রমিক কল্যাণের ২৫ কোটি টাকা যৎসামান্য অংক।