রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ ছাত্র সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ এ ছাত্র সমাবেশের ডাক দিয়েছে তারা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে এবং বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনকে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখাতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ সমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক নেতাকর্মীর আগমন ঘটবে। সমাবেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, সমাবেশকে সামনে রেখে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপস্থিতি বাড়াতে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে দিন-রাত প্রচার চালিয়েছে তারা। সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি ও বর্ধিত সভা ছাড়াও ২৯৮ সদস্য বিশিষ্ট ১৮টি উপকমিটি ও ১২৭টি সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে।
সমাবেশ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। সম্মেলনের মূল মঞ্চ সাজানো হয়েছে নৌকার আদলে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, বৈধ সরকারকে হটাতে ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যে চক্রান্ত চলছে, ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে তার প্রতিবাদ করা হবে। যুগে যুগে নৌকার অভিযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে তরুণ প্রজন্ম। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুণদের দিকনির্দেশনা দেবেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, সমাবেশ উপলক্ষে মঞ্চ, প্যান্ডেল তৈরির কাজ শেষ। স্থাপন করা হয়েছে সাউন্ড বক্স ও মাইক। এসব কাজ তদারকিতে রয়েছেন ছাত্রলীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তার স্বার্থে বসানে হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সমাবেশের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে উদ্যানে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশের সদস্যরা।
সমাবেশ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান কালবেলাকে বলেন, ইতিহাসের বিস্ময়কর সাক্ষী হতে যাচ্ছে এ সমাবেশ। সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সমাবেশ কেন্দ্র করে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা ঢাকা শহরে নয়, সারা দেশেই এর ঢেউ উঠেছে। সবাই সমাবেশে আসতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম বলেন, আমরা মনে করি, এটি রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অবিশ্বাস্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এই ছাত্র সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা গোটা বাংলাদেশকে এই বার্তা দিতে চাই—আমরা যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান থাকব, জাতির পিতার আদর্শে বলীয়ান থাকব এবং একই সঙ্গে খুনি-সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের সঙ্গে আপস করার কোনো জায়গা ছাত্র সমাজে আর নেই। এটি দেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর প্রতীকী সমাবেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বর্তমান তরুণ সমাজের কাছে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে সমাবেশ সফল করতে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রলীগ। নির্দেশনাগুলো হলো, সর্বাবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটে এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না; যে কোনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/ইউনিটের প্রতি তাৎক্ষণিক, চূড়ান্ত ও স্থায়ী সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; সমাবেশে প্রবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। সমাবেশ স্থলে ব্যানার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না; স্বেচ্ছাসেবকদের সরবরাহ করা উপকরণ বাদে পতাকা বা ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করা যাবে না; নির্ধারিত সময়ে গেট খুললে শৃঙ্খলার সঙ্গে সমাবেশে প্রবেশ করতে হবে; সমাবেশ স্থলে একাধিকবার প্রবেশ ও বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে; শারীরিক যে কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে মেডিকেল ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে হবে। সমাবেশ স্থল ও এর আশপাশে এলাকার পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে সতর্ক থাকতে হবে; জনদুর্ভোগ পরিহার করতে হবে এবং অযথা যানজট সৃষ্টি না করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল সকালে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডিএমপির গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মুহা. আশরাফুজ্জামানসহ যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপপুলিশ কমিশনার এবং বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।