প্রেক্ষাপট
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে ১০৫ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৭৬ জন বিশ্বনেতার বিবৃতি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলমান। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এমন ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য বাইরের দেশ থেকে আসা এবং তা যে বাংলাদেশের আদালত অবমাননার শামিল তা নিয়েও অনেকে যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
ড ইউনূসের পক্ষের বিবৃতিদাতাদের জ্ঞাতার্থে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের জানার সুবিধার্থে কিছু তথ্য শেয়ার করা জরুরি। ড ইউনূসের অনিয়ম ও আইন বহির্ভূত বেশকিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও এসেছে। কিছু কর্মকান্ডের কারণে আদালতের মাধ্যমেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ড ইউনূস।
আদালতের বাইরে মামলার নিষ্পত্তি করলেন ড ইউনূস
২০১৭ সালে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ জন কর্মকর্তা “শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ তহবিল” এর প্রাপ্য হিস্যা চেয়ে ১১০টি মামলা করেন। ডঃ ইউনুস আইনজীবি নিয়োগ করে কোর্টের বাইরে আই সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করেন। সেই নিষ্পত্তিতে উনি কর্মচারিদের ন্যায্য প্রাপ্য ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। যার ফলে কর্মকর্তারা ১০৬ টি মামলা প্রত্যাহার করেন। উল্লেখ্য, কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ ‘শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠন’ করে ২০০৬ সাল থেকে লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা। কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন তারা।
মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীকে দেয়া হয় বিপুল অংকের ঘুষ
গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফের তিনটি ব্যাংক হিসাব ও ইউসুফ আলীর ‘ল’ ফার্ম এটর্নিসের নামে একটি হিসাবে রয়েছে ১৬ কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ তহবিল’ কর্মীদের পাওনা সংক্রান্ত বিস্তর অভিযোগ ধামাচাপা দিতে ডঃ ইউনূস বড় অংক দিয়ে আইনজীবি ভাড়া করেন। যারা সকল মামলাকারীদের সাথে আদালতের বাইরে পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন এবং সেসব আইনজীবীদের একাউন্টে পাওয়া যায় ড ইউনূস কর্তৃক দেয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ।
অর্থ আত্মসাৎ ধামাচাপা দিতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ঘুষ প্রদান
‘শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ তহবিল’ এর হাজার হাজার কোটি টাকা তসরুফের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ডঃ ইউনুস বড় অংকের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেন। পরবর্তীতে দুদকের অনুসন্ধানে এর সত্যতা মিললে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের স্বাক্ষর করা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো ফ্রিজ করে ২০২২ সালে। কোম্পানি লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লুপাটের অভিসন্ধি থেকে ড ইউনূস এসব করেছিলেন।
কর পরিশোধের মাধ্যমেই ড ইউনূস স্বীকার করলেন কর ফাঁকির অপরাধ
কর ফাঁকি মামলার রায়ে হার ও কর প্রদান উচ্চ আদালতে কর ফাঁকি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ডঃ ইউনুস। যদিও দোশী সাব্যস্ত হবার পর দিনই উনি ১২ কোটি টাকা কর প্রদান করেন।
ট্রাস্ট গঠনের আড়ালে অর্থ আত্মসাৎ
কর ফাঁকির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হবার পর আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিজের পরিবারের ব্যয়ের টাকাও এ ট্রাস্ট থেকেই নিয়েছেন ইউনূস। উৎসব আপ্যায়নের জন্য ৪৭ লাখ, টেলিফোন বিল হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার বিল নথিতে উল্লেখ আছে। কিন্তু আইনে আছে ট্রাস্টে দান করলে সেখান থেকে আবার বাসার খরচ বা অন্যান্য খরচ তিনি নিতে পারেন না। তাই সমাজসেবার নামে কর ফাঁকির মহোৎসব চালিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ড ইউনূস।
ট্রাস্টের গঠনতন্ত্রেই রয়েছে অসঙ্গতি
মোট তিনটি ট্রাস্ট রয়েছে ড ইউনূসের। তবে ট্রাস্টে এমন বিধান রয়েছে যা থেকে প্রফেসর ইউনূস ও তার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। ট্রাস্টের সমাজসেবা দলিলের চুক্তির নয় নাম্বারে বলা হয়েছে, ‘ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক আফরোজি ইউনূস, দুই কন্যা মনিকা ইউনূস, দীনা আফরোজ ইউনূস ও তার পোষ্যদের রক্ষার জন্য।‘
কর ফাঁকির অভিনব পন্থা ড ইউনূসের
এছাড়াও বিভিন্ন শেল কোম্পানি গঠন করে এক কোম্পানির লাভ আরেক কোম্পানিতে দান করে কর ফাঁকি দেয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে ড ইউনূসের বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের জমাকৃত ৫% লভ্যাংশের হিসাবে ৩৬০০ কোটি টাকা ডঃ ইউনূস অন্য কোম্পানিতে দান হিসাবে সরিয়েছেন।