ঘটনার শুরু যেভাবে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নানা ভিডিও বার্তায় যেভাবে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্বাধীনতার পক্ষের আইনজীবীরা। গত ৮ আগস্ট স্বাধীনতার পক্ষের আইনজীবীরা অনলাইনসহ সকল গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার রুল শুনানির জন্য দিন ঠিক করতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু সেখানে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হট্টগোলসহ ন্যাক্কারজনকভাবে বিচারক ও আদালতকে আক্রমণ করে। বস্তুত আদালত অবমাননার মাধ্যমে বিএনপি দলীয় আইনজীবীরা বিচার বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের পুরোনো রীতি চালু রাখে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী তারেকের বিরুদ্ধে আদালতের পূর্ব আদেশ
- আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য কিংবা বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তার বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ওই রুল জারি হলেও তা নিষ্পত্তি হয়নি। সম্প্রতি তারেক রহমানের মিথ্যা বক্তব্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে।
- এ ধরনের নির্দেশ আদালত যে কেবল তারেক রহমানের বিরুদ্ধেই দিয়েছে, বিষয়টি তেমন নয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পলাতক আসামীদের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
পলাতক আসামী তারেকের যত মিথ্যাচার
- “জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। কেননা, তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।” ২৫শে মার্চ, ২০১৪ লন্ডন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লাগাতার বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিএনপির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেরার আসামী তারেক রহমান।
- দু’দিন পর ২৭ মার্চ ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বেগম খালেদা জিয়াও পুত্রের কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, যে যাই বলুক জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক।
- এর কয়েকদিন পর তারেক রহমান বললেন, “শেখ মুজিব পাকিস্তানি পাসপোর্টে দেশে এসে ১৯৭২ সালে অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করেন।”
- একই বছরের ৩০ মে জেনারেল জিয়ার হত্যা দিবসের প্রাক্কালে ২৯ মে লন্ডনে এক আলোচনা সভায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমান বলে, “শেখ মুজিব ৩০ বছর রাজনীতি করার পরেও রাজনীতিক হিসেবে ছিলেন ব্যর্থ।”
- সম্প্রতি লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়েও একনাগাড়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে তারেক রহমান।
তারেকের মিথ্যাচারের জন-প্রতিক্রিয়া
- সেই সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ‘পাতিহাঁসবিদ’ হিসাবেও ট্রল করা হয়।
- বিএনপির একনিষ্ঠ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এ ধরনের মন্তব্যে।
- ইতিহাসের মীমাংসিত বিষগুলোকে এভাবে বিকৃত করা এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা যেন আর না হয় সেজন্য বাংলাদেশে ইউরোপের “হলোকাস্ট ডিন্যাল ল”-এর আদলে “ইতিহাস বিকৃতি আইন” এর দাবী ওঠে।
রিটকারীদের সাম্প্রতিক আবেদন
- সম্প্রতি নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিএনপি যে সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে তারেক রহমান পুনরায় মিথ্যাচার করায় ফের হাইকোর্টে আসেন রিটকারীরা।
- রিটকারীদের দাবি পূর্বের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার পরও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিভ্রান্ত করে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়মিত প্রচার হচ্ছে মুলধারার মিডিয়াসহ সকল রকম প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায়।
- আদালতের প্রশ্নের জবাবে রিটকারী আইনজীবীরা আরও বলেন, তারেক রহমানকে কোন ঠিকানাতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যেহেতু সে পলাতক আসামী।
বিএনপির আইনজীবীদের আদালত অবমাননা
গত ২২ আগস্ট রিটের শুনানি চলাকালে বিএনপির আইনজীবীরা আদালত, বিচারক ও রিট আবেদনকারী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে নানা অশালীন বক্তব্য দেয় এবং কোর্টে হট্টগোল শুরু করে। আদালত অবমাননা আইন ২০১৩ অনুযায়ী, এটি অপরাধ এবং এ অপরাধের শাস্তির বিধানও রয়েছে আইনে। ফৌজদারি আইনের ৩৫ অধ্যায়ের বিধান অনুসারে, বিচারকার্য সমাপ্তির পূর্বে আদালতের সামনে ‘অবমাননা’ ঘটলে অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিতে পারেন। এমনকি, ক্ষেত্রবিশেষে আদালত অবমাননার অভিযোগে অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেদিন আদালত অবমাননাকারী বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি আদালত।